গত আট বছর ধরে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথমবর্ষে পরীক্ষার পরিবর্তে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ’র ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর, এবার সেই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এবার আবারও পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করে স্নাতকে ভর্তি নেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তিচ্ছু কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কবে, কীভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে, তা জানতে উদগ্রীব শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে চলতি সপ্তাহে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে। এতে ভর্তি-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকবে, যার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “গত সপ্তাহে আমরা ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চলতি সপ্তাহে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বিগত সময়ে যেভাবে পরীক্ষা নেয়া হতো, তা থেকে কিছুটা আলাদা পদ্ধতিতে এবার পরীক্ষা হবে। ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে আমরা পরীক্ষার পদ্ধতি, কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং কোনটিতে কত নম্বর থাকবে; সব উল্লেখ করবো।”

এগিয়ে আসছে আবেদন, পরীক্ষা হতে পারে মে মাসে

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মধ্যম মানের ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে অনেক ভালো ফলাফলধারীও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নেন। তাছাড়া আর্থিকভাবে অসচ্ছল গ্রামের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি-বেসরকারি স্নাতক কলেজগুলো অন্যতম ভরসা।

এমন পরিস্থিতিতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শুরুর রেওয়াজ বহুদিন ধরে বিদ্যমান, তবে এবার কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন আনতে চায়। ভর্তির আবেদন ও পরীক্ষা কিছুটা এগিয়ে এনে ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য নুরুল ইসলাম বলেন, “এখনো চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি, তবে আমাদের ভাবনা রয়েছে গুচ্ছ পরীক্ষার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হতে পারে।”

৬৪ জেলায় ভর্তি পরীক্ষা হবে

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ৬৪টি জেলা শহরে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ জেলায় স্বাচ্ছন্দ্যে পরীক্ষা দিতে পারবেন।

উপ-উপাচার্য নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা ৬৪টি জেলা শহরে ভর্তি পরীক্ষা নেবো। শিক্ষার্থীদের যেন কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, সেজন্য এটি করা হচ্ছে। তারা নিজেদের জেলা শহরে বসে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।”

বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ থাকছে

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ থাকে, তেমনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও এবার সেরকম সুযোগ দেবে।

অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার সেরকম সুযোগ থাকবে। নির্দিষ্ট আসনে শিক্ষার্থীরা বিভাগ পরিবর্তন করে ভর্তির সুযোগ পাবেন।”

ভর্তির শূন্য আসন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) কোর্স রয়েছে সারাদেশের ৮৮১টি কলেজে, এর মধ্যে সরকারি কলেজ ২৬৪টি এবং বেসরকারি ৬১৭টি। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে প্রথমবর্ষে ভর্তিযোগ্য মোট আসন ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৮৫টি।

আর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ডিগ্রি (পাস কোর্স) প্রথমবর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন ছিল ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৯০টি। প্রতি বিষয়ে সর্বোচ্চ ৮টি আসন কোটার জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা তিনটি, আদিবাসী একটি, প্রতিবন্ধী একটি, পোষ্য কোটা তিনটি।